যেহেতু কোন নির্দিষ্ট বলয়, বৃত্ত, বৈভব, ক্ষেত্রফল, ব্যঞ্ছনা, উৎকর্ষতা প্রভৃতির আঁচলে বেঁধে বলা যায় না কবিতা তুই অর্থ এই। অতঃপর তাই কাল-গণনা ক্ষণে-ক্ষণে আষ্টেপিষ্ঠে বাঁধতে পারেনি, দাঁড়- করাতে পারেনি সার্বজনীন সর্বসম্মত কোন সংজ্ঞা। কারণ কবিতা প্রতিমুহূর্তে আচরণে-আবরণে, আহ্বানে নিজের অস্তিত্ব তথা বোধজাত উপলব্ধি ঠিক রেখে নিজেকে ভাঙছে-গড়ছে।
ধরি, শব্দ বা ভাষা হচ্ছে পিতা, বোধ ও অনুভূতি হচ্ছে মাতা। আর এই পিতা-মাতা মিলিত হবার পদ্ধতি বা মিলন কলা হচ্ছে ছন্দ। এই রূপায়িত ভ্রুণ শরীরি চিত্রকল্প, দৃশ্যকল্প, প্রস্ফুটিত শৈলীর বক্তব্য, ভাবনার দর্শন- মিলিমিশে হয়ে যায় কবিতা। সেই অর্থে বলা যায়, কবিতার শব্দমালার স্তবক দিয়ে মহাকাল ধারণ করা যায় অনুভূতির পরিসর দিয়ে। দেখা যায় ভূত-ভবিষৎ ভাবনার চিত্রায়ণ। এই অনুভূতির গাঁথামালায় রূপ, রস, গন্ধ, চিত্র, সুখ-দুঃখ, প্রতিবাদ, আবেগ, সময়, আসত্তি, আকাঙ্খা, প্রেম, যুদ্ধ স্নেহ-মমতা, উৎপীড়ন, কান্না, প্রকৃতি, সৌন্দর্য, যৌনতা প্রভৃতি বাকসম্পন্ন বোবাভাবাবেগ চিৎকার করে উঠতে পারে, উঠছে-উঠবে কবিতার পঙ্তিমালায়। কবিরা তাই নিজস্ব দর্শনে বোধের প্রকৌশলে শব্দের পর শব্দ, পঙ্তির পর পঙ্তি বসিয়ে লালন করছে, গড়ে তুলছে কবিতা কলার ইমারত।
অনুভূতি, বোধ, কবিতার জন্মলগ্নে কবির মস্তিস্কের লালিত ভাবনার বৈশিষ্টগত বিবেচনা- প্রয়োগের মানচিত্র আঁকে। তাকে সাদ, গন্ধ, আনন্দ, তীব্রতায় সংরাগ এর তুঙ্গীয় উপস্থিতির জানান দেয়। প্রকম্পিত করে, প্রভাবিত করে, সৃষ্টি করে, ভাষাগত, আবেগগত শব্দের সম্পূর্ণ উপস্থাপনা, কল্পনায় অভীপ্সা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, উদ্বেগ, অভিজ্ঞতা প্রভাবিত হয়, প্রকম্পিত হয় এখানে, চিত্রায়িত হয় কবিতার বিষয়বস্তু ও দর্শন। সব মিলে তখন কবিতা শুধুমাত্র শব্দ-স্তবকের শরীরে আবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ে তার নিজস্ব সঞ্চারিত উদ্ভাবনে। যা তাকে শক্তি জোগায় সপ্ন দেখতে এবং দেখাতে। বস্তুত সেই সব জাগরণের উদ্ভাবনের শিল্পয়ান ব্যক্তির ভাবনাকে শৃঙ্খলিত করে তার অভিব্যক্তির পূর্ণায়ন রূপায়িত করে কবিতা জন্মলগ্নের দৃশ্যায়নে। অর্থাৎ ব্যক্তির মূল-সত্ত্বার ছায়ারূপ তখন কবিতা। যেখানে অস্তিত্বগত ঐতিহ্যের উপলব্ধি, সংবেদনশীলতা ও নির্ভরশীলতাকে পক্ষপাতহীনভাবে ধারণ করে। তাই শুধুমাত্র ভাষাশিল্প না হয়ে চেতনার সামগ্রিক শিল্পকলায় প্রজ্জ্বলিত হয়। আর এজন্যই কবিতা হচ্ছে মৌলিক শিল্প, মৌলিক দর্শন। অন্যান্য ক্ষেত্রের তথা শিল্প ব্যাতীত যেমন অন্য ক্ষেত্রে মৌলকতা বলতে যা বোঝায় তা মৌলকতারই প্রতিকী অর্থায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। কবিতা যেহেতু বোধের চরিতার্থকে আদর্শয়ান করে, চিন্তার স্তর বিন্যাস-ঘটায়, সম্মোহনে, আবর্তনে, সৃষ্টির পথে চেতনার অস্তিত্বের অবয়ব দেয়, পূর্ণাঙ্গ করে, তাই এখানে মৌলিকতার প্রতিরূপ না হয়ে পুরোপুরি মৌলিকতা মৌলিক বোধে ভিতরগত সত্তা আলোড়িত করে। কবিতার অভিনবত্ব এখানেই প্রতিনিয়ত সে শব্দ-ভাষা শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে চলছে। নিজের অস্তিত্বে, শব্দে, পরিভ্রমন করছে সময়, কাল, যুগ-ক্ষণ।
ঈশ্বরের সমগ্রসৃষ্টিতে জড়বস্তু ব্যতিরিক সবকিছুই ক্রমশ ছুটছে, যুগান্তরিত হচ্ছে, ভঙছে-গড়ছে নিজেকে। জগৎ-এ জড় বস্তুগুলোই শুধুই স্থির, বাকি সব অস্থির। অস্থিরতার বৈশিষ্টগত প্রকাশলিপি ক্ষেত্রগত কারণে ভিন্ন ভিন্ন। কবিতাকে জড়বস্তুর গুণে আবদ্ধ করলে তাকে বৃত্তাবধ্য করা হবে, শেকল পরানো হবে, হত্যা করা হবে। অর্থাৎ এখন বলা যায় অনুভূতির সমষ্টিক শিল্পকলার দর্শন যা স্পন্দিত করে জীবনের-বোধের লালিত অস্তিত্বগত সত্ত্বাকে, পরিবর্ধিত করে দৃষ্টিভঙ্গির সীমারেখা, জানতে, বুঝতে, চিনতে শেখায় মৌলিক মননে।
আর এই কবিতার চারণক্ষেত্র, লালনক্ষেত্র হচ্ছে জীবন। কবিতা কে উদ্ভাসিত করতে হলে ‘জীবন’ কে জীবনের বোধগত অস্তিত্বকে পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে। কারন জীবন ছাড়া কবিতা, কবিতা ছাড়া জীবন দুটোই অসম্ভব। জীবনকে গভীরভাবে উন্মোচিত, উপলব্ধিত করতে পারলে জীবনের রহস্যময়তা, সরলতা বাস্তবতা বোঝা যায় না। এক্ষেত্রে জীবন ও কবিতা সম্পর্কযুক্ত। তাই ‘জীবন’ কে জানা প্রয়োজন।
যাপিত এই জীবনের সন্ধিক্ষণ, পথচলার অতিক্রান্ত সত্তাসর্বসময় ‘জীবন’ এর দিকে আঙুল তুলে দেখায়, চিন্তায় মগ্ন থাকে, অস্তিত্বকে প্রশ্ন করে জীবন আসলে কি?
আমাদের চলাফেরা মুহূর্ত বর্ণনা মাত্র। যে চিন্তার খোরাক উদ্বেলিত হয়ে মানসিক তাড়না, আপেক্ষিকতার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পট্ পরিবর্তন করে তাকে অনুভীত, অনুমিত হওয়ার চেতনা, অস্তিত্ব, দায়িত্ববোধ, মৌলিক সপ্ন, দর্শন নাকি জৈবিক বিবেকে বার বার প্রকম্পিত হয়ে জীবনের জন্য জীবনকে ভোগ করা। এক্ষেত্রে জীবনকে মানসিক প্রশান্তির প্রদায়ক মনে হলেও তা কতটা সঠিক।অনুভীত জীবনের সকল তাড়না, রটনা, ক্ষণ বর্ণনা বা ধরে রাখা, এই ভাবনা প্রকাশের অন্যতম এক মাধ্যম হচ্ছে কবিতা। জীবনের এক এক দৃষ্টিকোণের তল গুলো কখনো অবতল, কখনো বা সমতল দেখায়। সবমিলে জীবনকে কতটুকু জীবন বোঝায়!
পরীক্ষাগারের সাথে অনেকখানি মিললেও জীবনকে পূর্ণচেনা বা ভোগ করে স্পর্শ আনন্দে উল্টে-পাল্টে দেখলে ও এর ব্যপ্তি, সংজ্ঞা, সম্ভাবনা, সাধিনাতা মাত্রা পায় না এখানেই কবিতার সাথে জীবনের অস্তিত্বগত মিল, দুটোই গতিশীল। আক্ষরিক জীবনকে জীবনের প্রতিবিম্ব মনে হতে পারে তখন এটি সংঙ্ঘবদ্ধ মানসিক প্রদাহের ফলাফল। আসলে অনুভীত দিকদর্শন বাদ পড়ে সেখানে। সেভাবে জীবনটাকে আপেক্ষিক বলা চলে। আপেক্ষিকতা ও আক্ষরিকতা এক করলে একটি রূপক বা শরীরি রূপান্তর প্রলক্ষিত হলে ও অঙ্গহানীর আশংকা থাকে। ঠিক যেমন কবিতার সাথে ছন্দের সম্পর্ক।
পূর্ণাঙ্গ একটি মানুষ তার নিজস্ব প্রকৃতিগত সাভাবিকতা -অসাভাভিকতা দিয়ে একে ভোগ করে। সে জীবনের কতখানি উপলব্ধি করে। এই উপলব্ধিগত বিবর্তন-স্পর্শিত, জাগৃত হয় নতুন নতুন ধারণা পায় এবং জীবনের এই অংশে অনেক নতুন কিছুর আবিস্কার বুঝতে পারা সম্ভব হয়। জীবন অনেক অংশে সার্বিকতার যা সামগ্রিকতা প্রকাশ করে। বিচিত্রতা, রহস্যময়তা এর সভাব্জাত বৈশিষ্টবোধের স্টাইলগত কারণে সাকিওতার জন্য একেকজন একেকভাবে চিন্তা করে প্রকাশ করে। তাই এর সামগ্রিকতায় প্রাণ থাকে। এ জীবন যখন বোধগম্য তখন এটি মনুষ্যজীবন মনে হয়। সম্ভবনা জাগায় কাব্যগত জাগরনের। অন্যান্য প্রাণীদের সাথে, জড়বস্তুর সাথে, মানুষের পার্থক্য এখানেই। জীবন তাই এতবেশী দ্বিধা-দ্বন্দের, হ্যাঁ-না’র, করব- করবনা’র, হবে-হবেনা’র তথা ভিন্নমূখীভাবে একটি মুদ্রার বৈশিষ্টের মত এপিট-ওপিট করে চলে। আর এ কারণে একজন জীবনটাকে যে ভাবে দেখে অন্যজন সে ভাবে দেখে না। ভোগের ব্যাপারে একই প্রক্রিয়া দেখা যায়। এ মত পার্থক্য শুধুমাত্র দৃষ্টিগত উপলব্ধির জন্য ঘটে কতকটুকু সার্থকতা পায় আবার পায়না। এই ‘পায়না’ কে ঘিরে প্রশ্ন উঠে কেন পায় না, সৃষ্টি হয় হতাশার।
পৃথিবীর ইতিহাস অল্প কিছু লোকের। যাঁরা তাদের জীবনের সন্ধিক্ষণে এটিকে ভেঙে-গড়ে নতুন করে নিজস্ব নিয়মে ক্ষুদ্র সময়ের জীবনকে বৃহৎ করেছে, জয় করেছে। তাই বলা চলে এর অবয়ব, অলংকার, ফর্মূলাকে আমূল পরিবর্তন করে তৃপ্তির সাধ নিতে, বুঝতে শিখিয়েছে, শেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে উপলব্ধিগত প্রতিফলন মনে হতে পারে। এই উপলব্ধি আর বোঝাপড়া এক নয়। এর স্তরে এত বেশী তীব্রতা ও ভিন্নতা রয়েছে যা মস্তিস্কের মাপকাঠিতে কৌণিক প্রতিচ্ছবির প্রতিবিম্ব আদলে আকার দেওয়া যায় না। প্রত্যেকে মানব হয়েও একই প্রকারবোধ একই মাপকাটিতে সম-তৃপ্তি-চিন্তা-ব্যাথার তীব্রতাবোধ সমপ্রখর হয় না। সামগ্রিকভাবে বোঝাপড়া লাইনচ্যুত তীব্রতাকে ক্রমশ অনুভূতি করে তোলে, একে সংজ্ঞায়িত করে।
একজন কতটুকু সুখ বা ব্যাথা বা তৃপ্তি বা কষ্ট পেল তার যেমন পরিমাপ প্রকাশ করা যায় না। তেমনি অন্যজন সমানুভূতি দিয়ে অল্প হলেও এর পরিমানগত দিকের প্রতিকীবোধ টের পায়। একমাত্র জীবনের এই অংশের বস্তুগত-অবস্তুগত চেতনার কথা, তীব্রতার কথা যে করছে বা যার উপর ঘটছে সে ছাড়া অন্য কেউই উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তো প্রতিকী ঢঙ- এ অন্যকে আমার সববেদনা জানাতে ভঙ ধরি। রঙচঙ লাগাই বোধে, পীড়নে, পরিতাপে। বলি, তোমার দুঃখে আমি ও দুঃখি! আসলে কি দুঃখি? কবিতার সাথে এখানে জীবনের সাদৃশ্য মুখোমুখি কারণ- কবিতাবোধে জোচ্চুরি চলে না দর্শন এখানে চিরতার মতন তিতা। উভয়ই সত্য ধারণ করে, রচনা করে কালের ইতিহাস।

একজন ধনবানের দুঃখ আরো প্রাপ্তির। একজন মধ্যবিত্তের দুঃখ হাহাকার ভরা ক্ষিধের। প্লেট ভর্তি খাবারের থালা আর পূর্ণিমাভরা চাঁদ পাশাপাশি রাখলে ‘মানুষ’ খাবারের প্লেট তুলে নেবে মানুষ বলে। খাবার ও মানুষ উভয়ই ব্যবহারগত অর্থে পরিচিত, এখানে কোন মরীচিকা নেই। যে মানুষ চাঁদ তুলে নেবে সে মানুষ হলেও মানুষ না। জীবনের সকল বোঝাপড়াগুলো যদি নিজের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্তে যাওয়া যায়, অনুভূতির দায়-কমে গিয়ে দায়িত্বে রূপ নেয়। সাধারণ ও অ-সাধারনের পার্থক্য এটাই। জীবনের ব্যপ্তি বোধ, পরিসীমা, নির্ধারণ, ভঙ্গি এক এক সময়ে এক এক রকমের নির্দিষ্ট। অস্তিত্ব কখনও লোপপায় না। স্থান পরিবর্তন করে মাত্র। এই সকল কিছুর সার্বিকতাই মিলে ‘জীবন’, জীবন কোন একক অস্তিত্ব নয়, অনেক অস্তিত্বের একতাই। অস্তিত্ব হল মানবিকতার, শৈলী-শিল্পের, বোধের পরিচয়। মৃত্যু জীবনের শরীরি রূপকের স্থান পরিবর্তন, অস্তিত্বের নয়। এটি রূপান্তরিত হয় মাত্র। স্থানচ্যুত অন্য আকার ধারণ করে আবর্তিত হয়। এর কোন পরিসীমা বা বিনাশ নেই। শুধুমাত্র অনুভূতিগত কারণে অস্তিত্বের এত ভিন্নতা এত তীব্রতা।
জীবন ঈশ্বরের মতই সত্য। যাকে ধরা যায় না, দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, বোঝাযায় অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। ঈশ্বর হচ্ছে মানবিক-মানসিক মস্তিস্ক-চিন্তার এমন এক অবস্থা, যেখানে পরিতৃপ্তি, পরিত্রাণ, আত্মরক্ষার এবং পরলৌকিক সাছন্দের সান্ত্বনা আন্নেসন করে। এটি বোধের বিপ্লবী বিবর্তন। সত্য-মিথ্যা অলীক সেখানে। চেতনার এ অবস্থার পরিবর্তন করা যায় না। প্রত্যেকে নিজের জন্য একই ঈশ্বরকে এক এক গুন ও রূপে আরাধনা করে- কামনা করে।
তাই বলা যায় জীবন ঈশ্বরে মতই সত্য ধারণা বিশেষ। কবিতা ও এক্ষেত্রে সমগোত্রীয়। এগুলোকে এক কথায় নির্মাণ এবং সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। তবে ভাবা যেতে পারে এদের নিয়ে। দৃষ্টিভঙ্গিমূলক, আচরনগত, জাগতিক, ইন্দ্রজাল, প্রত্ন্বসত্ত্বা, বিজয়ী-হতাশা তথা সর্বক্ষেত্রে এদের উপস্থিতি। জীবন, প্রকৃতি থেকে আলাদা কিছু নয়। এটি প্রকৃতির মৌলিকতার, বহুমাত্রিকতার, উপলব্ধিত শ্রেষ্ঠ অংশ। জীবনের বহুমাত্রিকতাই প্রকৃতি, প্রকৃতিতে জীবনের বহিঃপ্রকাশের, প্রচারণার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো কবিতা।
অনুভূতি, জীবন, কবিতা হচ্ছে প্রকৃতির অংশ, অংশগুলোর লালন-পালন, নির্দেশনায় ন্যাস্ত থাকে মানুষ। এই মানুষ বিন্যস্ত হয় মন, আত্মা ও বিবেকদ্বারা।
মন প্রকৃতি থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে।
আত্মা সেগুলোকে ধারণ করে।
বিবেক তার পর্যালোচনা করে বিচার করে।

বস্তু্তুত মন হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের অধিকার-অঙ্গীকার। মূল্যবোধ হচ্ছে আত্মা। আত্মার চারপাশে বিকিরণের কেন্দ্রভূত সার্বিকতা, আপেক্ষিকতা, উৎস, আবর্তিত উন্মোচনে পরিবেষ্টিত আবয়বই মন। তাই আত্মা বা মন এক বস্তু নয়। মনের উৎপত্তি আত্মা থেকে। আত্মা হচ্ছে প্রকৃতির অনুভূত অংশ। মন, শরীর ও বাহ্যিক প্রকৃতি থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে আত্মার কাছে পৌঁছে দেয়। মনের নিজস্ব কোন উপলব্ধি নেই। সে শুধু আত্মার বাহক, তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহকারী অবস্থা। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম তথা যাচাই-বাছাই হ্যাঁ-না এ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মাকে সহায়তা করে যে অবস্থা সেটি বিবেক। এক্ষেত্রের নানাবিধ কার্য-কারণগত সৃষ্ট সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। আত্মা প্রশমিত হয়ে নিজেকে যখন ব্যপ্তির দরজার দিকে নিয়ে যায় তখন মন অনুভূতির তীব্রতা বুঝতে পারে। এটি আবেগের উপশমগত প্রদাহ। আবেগের উৎপত্তি-তীব্রতা, মন ও আত্মার সংমিশ্রন, সংঘটন বা সংঘবদ্ধতা বা সংবেদন থেকে।
মানুষের এ সকল কিছুর সার্বিকতার সমষ্টিক শৃঙ্খলার উচ্চকিত আহ্বান থেকে বাক্যরা জোট বেঁধে শব্দে পরিণত হয়। শব্দগুলো একেএকে লাইন, পঙ্তি, অতঃপর কবিতার শরীরে রূপান্তিরিত হয়। তাই কবিতাকে উচ্চকিত উচ্চারণের প্রার্থনা বলা যায়, চেতনার বোধ বলা যায়, জীবনের পরমার্থিত শ্লোগান বলা যায়। আর কবিকে চেতনার কৃষক, দর্শনের কামার, অভিনবত্বের উদ্ভাবক, জীবনের উকিল, অস্তিত্বের স্মারক, সৃষ্টির সম্ভাবনা, বোধের মন্দির সহ নানান উপমার-বৈশিষ্টের সমষ্টিকতা বলা যায়। কবি জীবনের অনুভূতির প্রজনন ঘটিয়ে থাকে শব্দের প্রকৌশলে, চেতন-অবচেতন বহিঃপ্রাকাশে,তাই কবিকে কবিতার শাশ্বত্য প্রার্থনা সৃষ্টির প্রয়োজনে সৎ, সৃজনশীল এবং জীবনের গভীর বিশ্লেষক হতে হয়, নিজের অস্তিত্বগত ধারণার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন হতে হয়।
No comments:
Post a Comment